ফরিদপুরে ওটিবয়ের মাধ্যমে ক্যানসার অস্ত্রোপচার; হাসপাতাল সিলগালা, তদন্ত কমিটি গঠন
ফরিদপুরে ওটিবয়কে (নিয়োগপত্র অনুযায়ী ক্লিনার) দিয়ে এক নারীর অস্ত্রোপচার করা সুরক্ষা প্রাইভেট বেসরকারি হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় হাসপাতালটির প্রধান ফটোকেও তালা লাগিয়ে সিলগালা করা হয়।
আজ রবিবার (৬-৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার নাঈমের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে অবস্থিত সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে স্তন সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন ভুক্তভোগী নারী ববিতা বেগম। হাসপাতালের ওটি বয় শেখ নিয়ামুল (২৬) ভুক্তভোগী নারীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল সদরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মৌনমিছিল
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস বলেন, “ক্লিনার নিয়ামুলকে দিয়ে অস্ত্রোপচার, অপারেশন থিয়েটারের ফ্রিজ বন্ধ থাকা এবং ভিতরে ডেট ওভার হওয়া ওষুধ পাওয়ার কারণে হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
অভিযান ও ভুক্তভোগী নারীর চিকিৎসার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর ববিতা বেগম পূর্বপরিচিত ওটিবয় শেখ নিয়ামুলের শরণাপন্ন হয়ে মা ময়না বেগমকে নিয়ে হাসপাতালে যান। সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসান প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরে নিয়ামুল ভুক্তভোগীকে সরকারি হাসপাতালে না পাঠিয়ে নিজের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করার আশ্বাস দেন।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে টানা তিন দিন ১০ ডিগ্রি, শীতের তীব্রতা বেড়েছে
অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার করে স্তনের টিস্যু সংগ্রহ করা হয় এবং চারটি সেলাই দেওয়া হয়। নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। ভুক্তভোগীর সাত বছর ও এক বছরের দুই সন্তান রয়েছে।
এই ঘটনার ১৫ দিন পর অস্ত্রোপচারস্থলে সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকের মাধ্যমে সংক্রমিত স্তনের অধিকাংশ কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী নারী বাংলাবাজার পত্রিকাকে জানান, অস্ত্রোপচার শেষে সেখানে চারটি সেলাই দেয়া হয় এবং নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। প্রায় ১৬ দিন পরে বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পান। এরই মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়। ২ ডিসেম্বর পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানকে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শে ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সংক্রমিত স্তন কেটে ফেলা হয়।
বিভিন্ন মিডিয়া সংবাদ প্রচারের পর রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার নাঈমের নেতৃত্বে হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক আতিকুর আহসান বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, “পুরো স্তন নয়, সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনার জন্য সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ওটিবয় শেখ নিয়ামুলকে দায়ী করা হচ্ছে। ওটিবয়ের অস্ত্রোপচার করার কোনো অধিকার নেই।”
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানের সকলের অজানায় সে (ওটিবয়) এই কাজটি করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত রবিবার ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, “এ ঘটনায় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. বদরুদ্দোজা টিটোকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”





