প্রভাবশালীদের লোভ আর প্রশাসনিক উদাসীনতায় বিলীন হওয়ার পথে টেংরাগিরি বন
টেকসই উপকূলরক্ষার প্রাণ বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি সংরক্ষিত বন ধ্বংসের ধীরগতিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে শুধু গাছ কাটা নয়; চলছে ভূমি দখল, বালু উত্তোলন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও অগ্নিসংযোগ—সবকিছুর পিঠে আছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছায়া। ফলে পরিবেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকা উভয়ই ঝুঁকির মুখে।
সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা সংরক্ষিত বনের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এখানে আসেন। এই বনে গেওয়া, কেওড়া, ছইলা, ঝাউসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। তবে প্রভাবশালী ও দুষ্কৃতিকারীদের নজর পড়ায় বনের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর মাতারবাড়ী ও চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন
বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, এনভায়রনমেন্টাল ডিপার্টমেন্টের রতন চন্দ্র কিরতনিয়া, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির স্তর দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং বনায়নের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
তালতলির পরিবেশ কর্মী, আরিফ রহমান বলেন, তালতলী সৈকতের দুই পাশের বন শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখে। অথচ আগুন লাগিয়ে ও গাছ কেটে এই বন ধ্বংস করা হচ্ছে। বন প্রহরীদের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ী ও পরিবেশকর্মীদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে একসময় সৈকতে হারিয়ে যাবে টেংরাগিরি বন।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনে মাছধরার বোটসহ আটক-১৬
উল্লেখ্য, বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত টেংরাগিরি বা ফাতরার বন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন। এর আয়তন ১৩,৬৪৪ একর। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ ও ভাঙনের ফলে গত ৬২ বছরে শত কোটি টাকা মূল্যের প্রায় দুই হাজার একর জমি ও কয়েক লক্ষাধিক গাছ সাগরে বিলীন হয়েছে।
গত ২০২৪ সালে ২৫ মার্চ বনের বেহুলা নামক অংশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বন বিভাগ।
এছাড়া, সাগরঘেঁষা ঝাউবনও মারাত্মক হুমকির মুখে। অবৈধ বালু উত্তোলন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সৈকতের পাশে নির্মাণাধীন ৩৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের জন্য বালি উত্তোলনে ঝাউগাছ ভেঙে সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে। যদিও বন বিভাগ ২০১৪-১৫ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ঝাউগাছের চারা রোপণ করেছিল, তবে সংরক্ষণের অভাবে তা টিকছে না।
তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে অতিরিক্ত বালি জমে গাছের শেকড় আটকে যাচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে বনের বহু গাছ মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে মোহনা থেকে বালি উত্তোলন করায় কিছু সংখ্যক গাছ ভেঙে পড়ছে।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সিআইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।





