সচিবালয়ে আগুন, তদন্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবার জমা।
সচিবালয়ের চারপাশে সাজোয়া যান সহ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, ডিসি বদলি

বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নং ভবনে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন সোমবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার বেলা চারটায় জমা দেবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিনই কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনের সভাপতিত্বে কমিটির দীর্ঘ বৈঠক প্রতিদিনই হচ্ছে। সোমবারও টানা দুই ঘন্টা বৈঠক করে তদন্ত কমিটি।
তদন্তের বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হলেও সূত্র জানায় অগ্নিকাণ্ডের স্থানের কিছু রাসায়নিক আলামত বুয়েট ও সিআইডির ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এগুলোর পরীক্ষার প্রতিবেদন না আসায় প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না। তবে কমিটির বৈঠকে আগুনের ধরন দেখে কয়েক দফা পরিদর্শন করে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে সকলে একমত হয়েছে যে এটি কোন দুর্ঘটনা না। পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। দুর্ঘটনা হলে একটি কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতো । কিন্তু এখানে তিনটি স্থান থেকে একই সময়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
আবার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কক্ষ সম্পূর্ণ পড়ে গেছে। একই ভবনে অপর ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের কক্ষের পাশেও আগুন লেগেছে।
এদিকে রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে সচিবালয়ের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর বড় বড় সাজোয়া যান দিয়ে সচিবালয় প্রধান ফটক সহ চারপাশে সেনা চৌকি মতায়ন ছিল। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকের নির্দেশ অনুযায়ী সেনাবাহিনীর চৌকি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সচিবালয়ের পাশেই স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্প থেকে সচিবালের চারপাশে নিয়মিত থাকবে।
নিরাপত্তা প্রয়োজনে ডাকা হলে আরবি আবার অটল দিবে মর্মে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের গণসংযোগ পরিচালক ফয়সাল মাহমুদ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে মঙ্গলবার বেলা চারটায় সচিবালয় আগুনের ঘটনায় গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির তদন্তের কমিটি প্রদান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান নাসিমুল গণি বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান আজকের পরিবর্তে মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিকভাবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছুক্ষণ আগে আরও একদিনের সময় চেয়ে নিয়েছি। কারণ কিছু টেস্ট আজ রাতে হবে। সেগুলোর রিপোর্ট আসলে আগামীকাল মঙ্গলবার আমরা প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে পারব।
এদিকে সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের সচিবালয় নিরাপত্তা উপ পুলিশ কমিশনার তানভীর আহমদকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে বদলি করা হয়েছে। নতুন সচিবালয় নিরাপত্তার ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে বিল্লাল হোসেনকে। সচিবালয় নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকদের একটিটেশন কার্ড বাতিল করে অস্থায়ী পাশ দিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র সচিবালয় অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত কমিটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়েও তদন্ত করলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে নাশকতার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিসিটিভির ফুটেজ ও ঘটনাস্থলের অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় সাদা পাউডার পাওয়া গেছে। করিডরের মধ্যে কীভাবে সাদা পাউডার এল, সে প্রশ্ন উঠেছে। এটি কি দাহ্য নাকি চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), তা খতিয়ে দেখতে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন কমিটির কাছে আসেনি। কমিটির সদস্য বুয়েটের দুইজন বিশেষজ্ঞ সোমবার বিকালে বৈঠক শেষে জানান তারা আগামীকাল প্রতিবেদন পাইতে পারেন।
সচিবালয়ে মৃত একটি কুকুর কি আগুন লাগার আগে সেখানে ছিল, নাকি পরে উঠেছে, এটি রহস্যজনক এটি নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট কেন, তা নিয়ে বৈঠকে বুয়েটের একজন সদস্য প্রশ্ন তোলেন।
গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনটির ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় অবস্থিত পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে যায়। আগুন লাগার কারণ ও উৎস অনুসন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বৃহস্পতিবার রাতে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গঠনের পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস গণপূর্ত বিভাগ ও অপরাধ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সন্দেহজনক বিষয়টি মাথায় নিয়েই তদন্ত অনুসন্ধান করছে। আগুন লাগার ‘সময়কে’ (রাত পৌনে দুইটা) বিশেষ আমলে নিয়েছে তদন্ত কমিটি। রাতের বেলায় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এখন তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
২৫ ডিসেম্বর বুধবার ছিল বড়দিনের ছুটি। সেদিন সব সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। তবু অস্থায়ী পাস নিয়ে বেশ কয়েকজন অপরিচিত মানুষ সচিবালয়ে ঢুকেছেন বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। এরা কারা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত কমিটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। তাঁদের মন্ত্রণালয়ে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সময়ে আগুনের ব্যাপকতা কেন এত বেশি ছিল, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে ৭ নম্বর ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট দেখেন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কক্ষ কেন পুড়ে ছাই হলো তা–ও অনুসন্ধান করা উচিত বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।