বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

AK Azad
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:২৪ অপরাহ্ন, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ | আপডেট: ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করেছে এবং উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তুত। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সাথে বৈঠকে এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলছি, বাংলাদেশ বড় আকারে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস একাধিক সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশের কথা তুলে ধরে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন এবং আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন যে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।

প্রেস সচিব আরও বলেন, বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ একটি রফতানি কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে তৃতীয় দিনে গতকাল ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম সকালে (দাভোস সময়) প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এ তথ্য জানান। ফেসবুক-এর মূল কোম্পানি মেটার গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করেছে এবং উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশে আমরা আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তুত। অধ্যাপক ইউনূস মোট ১৪টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে গতকাল বুধবার তিনি ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদির ফেডারেল মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাবেক মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এদিকে, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতা সম্পর্কে জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তা প্রকাশ করা হবে। সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে গত বুধবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘের হাইকমিশনার এই মন্তব্য করেন।

তুর্ক বলেন, জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস থেকে প্রকাশিত হওয়ার আগে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশকেও প্রদান করা হবে। অধ্যাপক ইউনূস ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ছয়টি প্রধান স্বাধীন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও প্রায় একই সময়ে প্রকাশিত হবে।

এই প্রতিবেদনগুলো একে অপরের পরিপূরক হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমার থেকে নতুন করে হাজার হাজার শরণার্থীর আগমনের ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরও খারাপ হওয়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান।

পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে তুর্ক বলেন, তিনি এই বিষয়ে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করেছেন। নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন বন্ধ করার লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি রোহিঙ্গা সংকটের ওপর আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটগুলোর একটির দিকে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

তুর্ক একমত হয়েছেন যে, এই ধরনের সম্মেলন সংকটের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হারানো মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত তারেক আরিফুল ইসলামও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোড বলেছেন, কঙ্গোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বড় ভূমিকা পালন করেছে। দাভোসে এক সভায় প্রিন্স ইমানুয়েল একথা বলেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদির সাথে বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করেন।

সাক্ষাৎকালে, অধ্যাপক ইউনূসকে জানানো হয় যে বেলজিয়ামের রাজপুত্রের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী কর্তৃক চালু করা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে কঙ্গোতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে। প্রিন্স ইমানুয়েলের গ্রুপ কঙ্গোর সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছিল।

তিনি বলেন, কঙ্গোর বন এখন ব্রিটেনের দ্বিগুণ আয়তনের। তিনি বলেন, সংঘাতের পর ক্ষুদ্রঋণ সেখানে ২১,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে- যার মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাক্তন যোদ্ধা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এই অঞ্চলের কিছু অংশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রিন্স ইমানুয়েল ২০০৮ সাল থেকে কঙ্গোর ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানের পরিচালক।