প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিবাদ

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, ১৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ৪:১১ অপরাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বিগত (৮ মে) একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে “Why Atomic Energy Commission resists joining govt's digital payment system” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন সংক্রান্ত একটি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নজরে এসেছে। উক্ত সংবাদে কমিশনের আইনগত কাঠামো এবং কার্যক্রম যেমন: স্বায়ত্তশাসন, iBAS++ সিস্টেম, নিয়োগ ও আর্থ ব্যাবস্থাপনা, উচ্চশিক্ষা/প্রশিক্ষন, রূপপুরের পাওয়ার পার্চেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) ইত্যাদি  সম্পর্কে অসম্পূর্ণ, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে যা প্রকৃত অবস্থার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

বহুল প্রচারিত ও স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিকে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মতো একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অসত্য, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন কোনভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এই বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রত্যাখ্যান করছে এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নিম্নে প্রকাশিত সংবাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর যথাযথ ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো: 

আরও পড়ুন: জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ, উচ্চপদস্থ তদন্ত বোর্ড গঠন

১। iBAS++ সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বাপশক’র অবস্থান:

“বাপশক এক বছরের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে (iBAS++) যুক্ত না হওয়ায় আর্থিক অনিয়মের শঙ্কা দেখা দিয়েছে”-এই ধরনের ভিত্তিহীন দাবিকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। এ ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী আর্থিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। 

আরও পড়ুন: সংস্কার করে কালক্ষেপণ করলে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে: রুহুল কবির রিজভী

বাপশক এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য অর্থ ও বাজেট এবং নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে যা সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন  উপসচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। সকল আর্থিক লেনদেন সরকারি বিধি-বিধান, আর্থিক নীতিমালা এবং বাজেট নির্দেশিকা অনুসরণে সম্পাদিত হয়। তদুপরি, বাপশক’র হিসাব প্রতিবছর মহাহিসাব নিরীক্ষক কর্তৃক নিরীক্ষা করা হয় এবং ফলাফল সরাসরি সরকারে উপস্থাপন করা হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা যেকোনো ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিফলন। সুতরাং, বাপশক’র আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন ভীষণভাবে অগ্রহণযোগ্য।

বাপশক আইনের ধারা ২০(২)-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে: “তহবিলের সমস্ত অর্থ কমিশনের নামে এমন কোন তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখা হইবে যাহা কমিশন নির্ধারণ করিবে এবং উহা এতদবিষয়ক বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হইবে।” এ বিধান  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন-এর সঙ্গেও সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। UGC ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব আইনগত কাঠামোয়  iBAS++ বহির্ভূত স্বতন্ত্র আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনা করে। একইভাবে, বাপশক একটি সংবিধিবদ্ধ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব আইনের অধীনে iBAS++ -এর বাইরে স্বতন্ত্র আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনা করার অধিকার রাখে। iBAS++ চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বাপশক’র আইনগত স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

iBAS++ একটি কার্যকরী সফটওয়্যার, কিন্তু বাপশ’র মত একটি স্পর্শকাতর বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি ডিজাইন করা হয়নি। গত ২২/০৪/২০২৫ ইং তারিখের সংবাদ সম্মেলনে আমরা IAEA--এর Nuclear Security Series 23-G-এর গাইডলাইন অনুযায়ী পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমান, অবস্থান, উৎপাদক ও সরবরাহকারী তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় কর্মরত কর্মীর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশর ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০২৩ অনুযায়ী বাপশক-কে “গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (Critical Information Infrastructure)” ক্যাটাগরীতে অন্তর্ভূক্ত করে একটি স্পেশালাইজড সলিউশন চাই, যেখানে কমিশনের ডেটা সম্পূর্ণ আইসোলেটেড সার্ভার এবং এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন-এর মাধ্যমে সংরক্ষিত হবে, যেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের অ্যাক্সেস থাকবে না। 

২. সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ:

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্টসিয়াল আদেশ নং ১৫-এর অধীনে একটি Body Corporate হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালের “বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন”-এর মাধ্যমে এটি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই আইনের মাধ্যমে কমিশনকে তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র আইনগত মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। 

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যে, উক্ত আইন ও তার অধীন প্রণীত বিধি-বিধানে কমিশনকে যে সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়েছে, তা বাস্তবে উপেক্ষিত হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কমিশনের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ করে কমিশনের সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসন  ক্ষুন্ন করছে, যা সুস্পষ্টভাবে আইনের পরিপন্থী।

“বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭”-এর ধারা ১৪-তে বলা হয়েছে: “সরকার, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সময়ে সময়ে কমিশনকে নীতিগত নির্দেশনা বা আদেশ প্রদান করতে পারবে এবং কমিশন উক্ত নির্দেশনা পালন ও বাস্তবায়ন করিবে।”

তবে বাস্তবে আইনের এই ধারা ভুলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় কৌশলগত নির্দেশনার সীমা অতিক্রম করে কমিশনের দৈনন্দিন প্রশাসনিক ও কার্যক্রমিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছে, যা স্পষ্টভাবে  তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত।

এই ধরনের হস্তক্ষেপ বাপশক আইন ২০১৭ এর ধারা ১৪-এর মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। উক্ত ধারা সরকারের নীতিনির্ধারণী ভূমিকার কথা বললেও, কমিশনের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয় না। মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ববাদী এই আচরণ কমিশনের সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুন্ন করছে, সার্বিক কর্মকাণ্ডে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে এবং কমিশনের সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

৩। নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ:

নিয়োগ:

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুকূলে রাজস্বখাতে সৃজিত পদে বাপশক চাকুরীবিধিমালা ১৯৮৫ এর তফসিলে বর্ণিত বিধানের আলোকে সরকার অনুমোদিত সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। সুতরাং সরকারের অনুমোদন ব্যতিত কমিশনে ৯০০ কর্মকর্তা নিয়োগের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর।

গ্রেড-২, গ্রেড-১ প্রাপ্তি:

বাপশক চাকরিবিধিমালা, ১৯৮৫-এর ধারা ১৮(২) অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের বেতন-ভাতা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুরূপ নির্ধারিত। সেই প্রেক্ষিতে, যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ সুবিধা লাভ করেন, কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমপর্য়ায়ের বিজ্ঞানীরাও একইভাবে উক্ত গ্রেড সুবিধা প্রাপ্ত হন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৩৯.০০৬.০০.০০.০০৬.০৩১.২০১৪.৫৮, তারিখ ০৯/০২/২০১৭ অনুযায়ী, বাপশক চাকরিবিধিমালার বিধানের আলোকে কমিশনের বিজ্ঞানীদের গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া, হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৩৬৯২-৩৭০৪/২০০৩ এর রায়ের মাধ্যমে কমিশনের বিজ্ঞানীদের গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ প্রাপ্তির বিষয়টি আইনগগতভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

তথ্য ও আইনগত ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও কমিশনের বিজ্ঞানীদের গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিভ্রান্তিকর এবং বিজ্ঞানীদের মর্যাদার পরিপন্থী।

বছরে ১২টি বোনাস:

কমিশনের নিজস্ব আয় থেকে কোনো কোনো বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১২টি বোনাস প্রদান করা হয়েছে মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। বাস্তবিকপক্ষে, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাপশক চাকরিবিধিমালার ধারা ২০, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক ২৫/০৭/১৯৯২ ইং তারিখে অনুমোদিত আয় বণ্টন নীতিমালা এবং বাপশক আইন ২০১৭এর ধারা ১৯(২) অনুযায়ী, নিজস্ব আয়ের সর্বোচ্চ ৪০% অংশ বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করে থাকে।

এই প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি সরকারি আদেশ, প্রচলিত বিধি-বিধান এবং হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৬৬৫১/২০০৪-এর রায়ের মাধ্যমে বৈধতা অর্জন করেছে। সুতরাং, iBAS++ (Integrated Budget and Accounting System) ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত না থাকার বিষয়টিকে কমিশনের প্রণোদনা প্রদানের সাথে সংযুক্ত করা সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিকর ও অযৌক্তিক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহও তাদের নিজস্ব আয়ের অংশ থেকে একই রূপে প্রণোদনা প্রদান করে থাকে।

 ৪। উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষন এবং রূপপুরের পিপিএ সংক্রান্ত উত্তেজনা:

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চাকরিবিধিমালার অনুচ্ছেদ ৩৪-এ উচ্চশিক্ষা (যেমন এমএস, পিএইচডি, ডিপ্লোমা, পোস্টডক ইত্যাদি) ‘প্রশিক্ষণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ ধরনের প্রশিক্ষণ বিদেশে গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কমিশনের নবীন বিজ্ঞানীদেরকে বিদেশের পরিবর্তে দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করছে, যা কমিশনের চাকরিবিধিমালা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের “প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা নীতিমালা, ২০২৩”-এর পরিপন্থী। 

চাকরিবিধিমালা অনুযায়ী, যেকোনো ধরণের প্রশিক্ষণে প্রার্থীদের মনোনয়ন পূর্ণ এখতিয়ার কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকলেও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশিক্ষণে মনোনয়ন প্রদান করছে। এমনকি সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক প্রশিক্ষণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।  গত এক বছরে মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। 

প্রকাশিত এক সংবাদে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় পোস্টডক গবেষণাকে চাকরি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। কমিশনের চাকরিবিধিমালায় পোস্টডক গবেষণাকে প্রশিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হইয়েছে এবং “প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা নীতিমালা, ২০২৩”-এ এটিকে উচ্চতর গবেষণা হিসেবে উল্লেখ করা হইয়েছে। উন্নত বিশ্বে পোস্টডক গবেষণা ছাড়া কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করাও প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট এবং জাপানের জেএসপিএস ফেলোশিপ প্রাপ্ত দুইজন বিজ্ঞানীকে পোস্টডক গবেষণার জন্য জিও (সরকারি আদেশ) প্রদান করা হয়নি, যা উদ্বেগজনক। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মতো একটি গবেষণাভিত্তিক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা এবং সম্পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েও পোস্টডক গবেষণায় অংশগ্রহণে বাধা প্রদান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।   

রূপপুরের পাওয়ার পার্চেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ):

প্রকাশিত এক সংবাদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় মন্তব্য করেছেন যে, কমিশনের মূল কাজ গবেষণা ও উন্নয়ন। কিন্তু এ মন্তব্যটি আংশিক এবং কমিশনের সামগ্রিক দায়িত্ব ও কার্যপরিধিকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করে না। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭-এর ধারা ১০(৪)-এ বলা হয়েছে: “পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং উহা হইতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার কার্য ও বিষয়াদি সম্পাদন।” অর্থাৎ কমিশনের দায়িত্ব শুধু গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন ও পরিচালনার যাবতীয় কার্যক্রম এর আওতাভুক্ত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে রাশিয়ার JSC Atomstroyexport-এর সঙ্গে কমিশনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও উক্ত চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুরে প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের Owner Organization) হিসেবে কমিশনের নামেই সাইটিং, ডিজাইন ও নির্মাণ, কমিশনিং, জ্বালানি আমদানি, পরিবহন এবং গুদামজাতকরণসহ সকল লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে কমিশনের অধীনেই Nuclear Power Plant Company Bangladesh Limited (NPCBL) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে, যদিও কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রণালয়ের সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সম্প্রতি মন্ত্রণালয় কমিশনকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সরাসরি পিডিবি ও এনপিসিবিএল-এর মধ্যে সম্পাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর উপর কমিশনের আইনি কর্তৃত্ব ও ভূমিকা খর্ব করেছে, যার ফলে কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।