সরকারি খাল উদ্ধারে আবাসন প্রকল্পে প্রশাসন-পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি খাল দখলসহ সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করছে। পূর্বাচল ইস্টউড সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প সরকারি ৭টি খাল দখল করে বালু ভরাট করে ফেলে। এতে স্থবির হয়ে যায় ৭ গ্রামের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
জলাবদ্ধতা নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন যৌথভাবে পূর্বাচল ইস্টউড সিটিতে অভিযান পরিচালনা করে। তারা আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারি খাল দখলের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক কয়েকটি খাল দখলমুক্ত করে।
আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতির প্রতারকরা, দিশেহারা গ্রাহকরা
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা পরিবেশ ছাড়পত্র সদর দপ্তরের পরিচালক মাসুদ ইকবাল মোহাম্মদ শামীম, নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাছবীর হোসেনসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাছবীর হোসেন জানান, কাঞ্চন পৌরসভা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হাটাবো টেকপাড়া, কালাদি, নলপাথর, নরাবো, কোশাব, আইতলা, ডুলুরদিয়া গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব গ্রামের কৃষি জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৭টি খাল রয়েছে। এসব খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি সরে যেত।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় পুরাতন ভবনের ছাদ ধসে ৩ শ্রমিক নিহত, আহত ২
বেশ কয়েক বছর ধরে ইস্টউড সিটি নামের একটি আবাসন প্রকল্প পানি নিষ্কাশনের সরকারি খালগুলো ভরাট করে দখলে নিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টি হলেই পানি আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে থাকে এলাকা গুলোতে।
বিশেষ করে, হান্ডি মার্কেট হতে ডেওরি বিল পর্যন্ত খাল, মুকসুর বাড়ি থেকে মগার বাড়ি পর্যন্ত চিপা খাল, কালাদি থেকে ভুলতা বড় খাল, বাড়ৈপাড়া থেকে ডুলুরদিয়া হয়ে নলপাথর খাল, ইকবালেরটেক থেকে নরাব খাল এবং নরাব থেকে নলপাথর পানি নিষ্কাশন খালটি বালু ভরাট করে বন্ধ করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
ওইসব এলাকায় বেশ কয়েকটি পাকা রাস্তা ডুবে গেছে। ময়লা ও আবর্জনাযুক্ত এসব পানিতে শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী-পুরুষরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এসব গ্রামের মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন প্রায় ৫ বছর ধরে। শত শত গ্রামবাসী সরকারি খাল ভরাট, অবৈধভাবে মানুষের বাড়িঘরের অনুমোদনের প্রতিবাদে ইস্টউড সিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এলাকাবাসীর এ জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের টনক নড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর পূর্বাচল ইস্টউড সিটিতে অভিযান পরিচালনা করে খাল ভরাটের সত্যতা পান।
এ সময় প্রশাসন কয়েকটি খাল ভেকু দিয়ে দখলমুক্ত করে। বাকি খালগুলো দখলমুক্ত করতে ইস্টউড সিটিকে তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এছাড়া ১৪৮ একর জমির অনুমোদন নিয়ে ৩০০ একর জমিতে বালু ভরাট করে ইস্টউড আবাসন কোম্পানি।
এদিকে, অভিযান পরিচালনার সময় আবাসন কোম্পানির দালাল আব্দুল হাইসহ কয়েকজন বাধা প্রদান করলে এলাকাবাসী তাদের লাঞ্ছিত করে।
ইস্টউড আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, আমাকে ৩ মাসের সময় দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের আগেই সরকারি খাল খনন করে দেবো। এছাড়া নিয়মকানুন মেনে সকল প্রকার কার্যক্রম চালাবো।
ঢাকা পরিবেশ ছাড়পত্র সদর দপ্তরের পরিচালক মাসুদ ইকবাল শামীম বলেন, ইস্টউড আবাসন কোম্পানিতে অভিযান পরিচালনা করে সরকারি খাল ভরাটের সত্যতা পাই। কয়েকটি খাল ভেকু দিয়ে খনন করে দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। কোম্পানিকে তিন মাসের সময় দেওয়া হয়েছে দখলকৃত সবগুলো খাল খনন করে দিতে।