রামগঞ্জে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন: স্বর্ণের লোভে মা-মেয়েকে হত্যা

Sanchoy Biswas
জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ন, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:০৪ অপরাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পারভেজ নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুন: অমানবিক পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করলো বিজিবি

গ্রেপ্তারকৃত পারভেজ নিহত জুলেখা বেগমের ননদের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর সে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করে।

পুলিশ জানায়, অভাবের কারণে স্বর্ণের লোভে নিজের মামী জুলেখা বেগম ও মামাতো বোন তানহা আক্তার মীমকে হত্যা করে ঘাতক পারভেজ। ঘটনার পর আলমারি ভেঙে প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় সে।

আরও পড়ুন: জামালপুরের আলোচিত মনিরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার

পুলিশ ও পরিবার জানায়, গত ৯ অক্টোবর বিকেলে রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর গ্রামে নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে মা এবং কলেজপড়ুয়া মেয়েকে খুন করা হয়। ভিকটিমরা উপজেলার সোনাপুর বাজারের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী ও সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের স্ত্রী ও কন্যা।

জেলা পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল মাঠে নামে। ডিবির তদন্তকারী দল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের ভাগিনা পারভেজকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ জানায়, সে দুই মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসে। তার প্রচণ্ড টাকার অভাব ছিল এবং স্থানীয় একটি এনজিওতে ঋণ ছিল। এছাড়া একটি ব্যাংকে তার একাউন্টে থাকা এক লাখ ৭০ হাজার টাকা সে উঠাতে না পেরে আর্থিক সংকটে ভোগে। অভাবের তাড়নায় সে তার মামা মিজানুর রহমানের বাসা থেকে স্বর্ণালংকার লুটের ফন্দি আঁটে।

ঘটনার দিন বিকেলে রামগঞ্জ শহর থেকে একটি চাকু কিনে সে মামার বাড়ি চন্ডিপুরে যায়। বাড়িতে মা জুলেখা ও মামাতো বোন মীম একাই ছিল। তারা পারভেজকে আমড়া ও আপেল খেতে দেয়। এরপর সে মীমের সাথে ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে যায়, সেখানে সে মীমকে এলোপাতাড়ি চুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এরপর নীচ তলায় নেমে মামী জুলেখাকে উপর তলায় ডেকে নেয়। মামী উপর তলায় গেলে তাকে পেছন দিক থেকে পারভেজ একটি প্লেটের সাহায্যে মাথায় আঘাত করে, পরে টি-টেবিলের সাহায্যে আঘাত করে। এতে সে পড়ে গেলে চুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে একটি শাবল দিয়ে আলমারি খুলে সেখানে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায়। আসার সময় নিজের জামা কাপড় বদলে মামাতো ভাইয়ের জামা কাপড় পরে নেয়।

পুলিশ জানায়, পারভেজ লুটকৃত স্বর্ণের প্রায় এক ভরি লক্ষ্মীপুরের দুটি দোকানে বিক্রি করে দেয়। বাকী প্রায় ছয় ভরি স্বর্ণসহ সে ঢাকায় অবস্থান করে। তাকে গ্রেপ্তারের পর স্বর্ণগুলোও উদ্ধার করা হয়।