জাকসু নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট অনুরাগী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের জোট

Sanchoy Biswas
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ন, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদে (জাকসু) ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মহান স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধীরে সংগঠিত হয়েছে। আসন্ন জাকসুতে জাবি শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য আব্দুর রশিদ জিতুকে সামনে রেখে সাবেক ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। প্যানেলটির নাম স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন। এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। এই প্যানেলকে সব ধরনের ফান্ডিং এবং বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫–২০২৬ শিক্ষাবর্ষের আইবিএ এমবিএ ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জিএস পদপ্রার্থী জানান, ছাত্রদল, শিবির বা বাগছাস এদেরকে টাকা দেওয়ার জন্য, লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তার দল রয়েছে। কিন্তু জিতুর প্যানেলের কে আছে? এতো টাকা জিতু কোথা থেকে পাচ্ছে? আমরা খবর পেয়েছি প্রো ভিসি প্রশাসন জিতুকে সাহায্য করছেন।

এ দিকে একটি টকশোতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী মোঃ শেখ সাদী হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একটি আলাপ রয়েছে, ঘুমন্ত ছাত্রলীগকে জিতু ভাই শেল্টার দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন: জ্যোতির্বিদদের অনুসন্ধানে উন্মোচিত মহাবিশ্বের রহস্য

বক্তব্যটি শুনেই টকশোতে জিতু উত্তেজিত হয়ে যান।

একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছেলেদের প্রতিটি হলে সাবেক ছাত্রলীগ যারা, তারা জোটবদ্ধ হয়ে জিতুর পক্ষে কাজ করছেন। এরকম কয়েকটি প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। মওলানা ভাসানী হলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুর শাওন পাঁচ আগস্ট পর থাকতেন না হলে। কিন্তু জাকসু উপলক্ষে চলে এসেছেন হলে, সারাদিন জিতুর হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া মওলানা ভাসানী হলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রিফাত, রফিকুল ইসলাম সিফাত, মীর মশাররফ হোসেন, হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মৃন্ময় দাস, কামাল উদ্দিন, হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মুজতাহিদ সহ একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আব্দুর রশিদ জিতুর প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া জিতুর প্যানেলে সহ সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম। তিনি ছাত্রলীগের হল ক্যান্ডিডেট ছিলেন।

এ দিকে অধ্যাপক সোহেল আহমেদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে আন্দোলন হয়। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হামলার মদদ দিয়েছেন। পাঁচ আগস্ট পর তার নিয়োগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা ও শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালে শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মোছার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করতে চায়, সে জন্য অনশনে বসেছিলেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুর রহমান এনাম। এ সময়ে অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু এনামের অনশনে সংহতি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে ততকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই ছাত্রকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জামায়াতে ইসলামী পন্থী শিক্ষকরা ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলকে জেতানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। হলে হলে নিজেদের প্রভোস্ট বসিয়ে শিবির এবং ছাত্রী সংস্থাকে হলে শেল্টার দেওয়া এবং তাদেরকে স্পন্সর করার অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান জামায়াতে ইসলামী পন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

সূত্র বলছে, জামায়াত পন্থী শিক্ষকরা চাচ্ছেন জিএস পদে শিবিরের অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে। এজন্য ইতিমধ্যে নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথেও অনেকে যোগাযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আব্দুর রশিদ জিতুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বললে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করেন।