সুনামগঞ্জে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম,চরম হতাশায় নিম্ন আয়ের মানুষ

সুনামগঞ্জের-হাট-বাজারগুলোতে কয়েক দিন ধরে সব ধরনের সবজি সহ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। যার প্রভাব নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ ওপর দেখা দিয়েছে। আলু-ডাল ছাড়া সকল প্রকারের সবজির দাম এখন ৭০-১৫০ টাকা। শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে চাল-সয়াবিন-মুরগী-ডিম-মাছ-মাংস-পিয়াজ সহ সকল পণ্যের। এতে করে সংকটে পড়েছেন নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ। রোববার(১৭ আগস্ট) সুনামগঞ্জের বড়বাজার সহ আশপাশের কয়েকটি বাজারে নিত্যপণ্যের এমন বাড়তি দাম দেখা যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ১০০-১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৬০-৭০ টাকা বেশি। এছাড়া করলা, বরবটি, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়শ, লতি, কাঁকরোল ৯০-১০০, লাউ প্রকারভেদে প্রতিপিস ১০০-১২০ টাকা। কচুরমুখী প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা। কচুর ছড়ি, পেঁপে ও মিষ্টিকুমড়া ৫০-৬০ টাকা কেজি। এছাড়া টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা ও কাঁচামরিচ ২৫০-২৮০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছিল। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম খুচরা প্রতি লিটারে ১৯০ টাকা এবং খোলা প্রতি লিটারে ১৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে মানভেদে প্রতিকেজি ১৩০-১৫০ টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। পিয়াজের দাম বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মহাখালীতে পেট্রোল পাম্পে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট
এদিকে চালের বাজারেও দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকা, মাঝারি চাল ৬০-৭০ টাকা এবং সরু চাল (মিনিকেট/নাজির/কাটারিবোগ) ৭৮-৯৫ টাকা। বাজারে মাছ আগের মতই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় ইলিশ কেজি ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা, ছোট ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৯০০ টাকা। জাটকা ৬৫০-৭০০ টাকা। রুই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, বোয়াল মাঝারি ৭০০,বড় ১০০০ টাকা, তেলাপিয়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কেচকি ৫০০ টাকা, টেংরা ৮০০-৯০০ টাকা, বেলে মাছ ১১০০-১২০০ টাকা, মাঝারি ধরনের চিংড়ি ১০০০-১২০০ টাকা ধরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সবধরনের মুরগির। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
এদিকে পূর্বের দামেই বহাল রয়েছে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম।প্রতিকেজি গরু ৭৫০ টাকা এবং ছাগল প্রতিকেজি ১০০০-১২০০ টাকা। ডিমের বাজারও চাঙ্গা। বর্তমানে এক কুঁড়ি লাল ডিম ২৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। এছাড়া হাঁসের ডিম এক কুড়ি ৩৭০-৩৮০ টাকা। সবজি বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাজারে সবজির সংকট দেখা দেওয়ায় দাম চড়া।মাছ বিক্রেতা ফারুক মিয়া বলেন, নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। জেলেদের কাছ থেকে যে কয়টা মাছ পাওয়া যায় তা আবার চড়া দামে কিনতে হয়। ডিম বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ। তাই খামারিরা বাড়িয়ে দিয়েছে ডিমের দাম।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে নারীকে গলা কেটে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নীরব গ্রেপ্তার
পাইকারি চাল-ডাল-পিয়াজ বিক্রেতা সজল দাস বলেন, দেশের বড় পাইকারি বাজার গুলোতে পণ্যের দাম ঊর্ধমুখী। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল পণ্য জাত অনুযায়ী কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা, সকল ধরনের চাল কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। এর ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুনামগঞ্জের বড়বাজারে বাজার করতে আসা মনোয়ার মিয়া বলেন, বাজারে দেখছি সবজি সহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম। বিগত কিছুদিন পূর্বে সবধরনের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কি কারণে আবার হঠাৎ বাড়তি তা বর্তমান সরকার ভাল বলতে পারবে। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের না খেয়ে মরার মত অবস্থা হবে। দিন যত যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যদি এভাবে দাম বাড়ে তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবেগ্রহণ, ট্রাইব্যুনাল-১।