ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত সিলেট, শতকোটি টাকার বানিজ্যের আশা

প্রকৃতির নিজ হাতে সাজানো গোছানো অপরুপ সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের চা-বাগান ঘেরা রূপের রাণী সিলেট। সাদা পাথরের বিছানা জাফলং এর পাহাড় আর নদীর প্রেমে পড়ে যান এখানে আসা পর্যটকরা। টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর কর্মজীবনের ক্লান্তি ভুলতে প্রতি ঈদে সিলেটে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে।
এখানে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও ঈদের ছুটিতে ঢল নামে। তাই ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করে নিতে নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে শত শত হোটেল ও রিসোর্ট। এরইমধ্যে একাধিক কটেজ ৯০% বুকিং হলেও হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট প্রায় ৫০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। আর পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন- এর জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতির প্রতারকরা, দিশেহারা গ্রাহকরা
এবারের ঈদে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আগমন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। গেল বছরের চেয়ে এবারের ঈদে শত কোটি টাকার ব্যবসার আশাবাদী একাধিক ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় পুরাতন ভবনের ছাদ ধসে ৩ শ্রমিক নিহত, আহত ২
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের কাছে সিলেটের জাফলং, সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, চা-বাগান পছন্দের শীর্ষে। অবসর পেলেই এসব স্পটসহ সিলেটজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ছোট পাহাড়-টিলা আর ঝরনা দেখতে ভিড় জমান পর্যটকরা। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.) মাজারেও প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন।
সিলেটের দরগা গেইটে অবস্থিত হোটের অর্কিড গার্ডেনের পরিচালক সারওয়ার খান দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, পুরো রমজান মাস পর্যটকশূন্য ছিল সিলেট। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র এখন পর্যন্ত বেশ বুকিংয়ের ফোন আসছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ অগ্রিম বুকড হয় গেছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে ইতোমধ্যে আমরা হোটেলের বাড়তি সৌন্দর্যবর্ধন শেষ করেছি।’
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) এর সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, গত কয়েক বছর বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিলেটের পর্যটন খাত ছিল লোকসানের মুখে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও হঠাৎ করে ছিনতাই-ডাকাতির মত ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সিলেটে পর্যটকদের আগমন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী চৌধুরী জুয়েল জানান, পর্যটকদের বরণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ঈদকে কেন্দ্র করে হোটেলগুলো নতুন করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। পর্যটকদের হোটেল বুকিং নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজ হাসান ফেরদৌস জানান, এবার ঈদে সিলেটের স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীর থাকবে। ঈদে এই খাত থেকে শত কোটি টাকার ব্যবসার আশা করা হচ্ছে।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. সম্রাট তালুকদার জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্পটে থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে স্পটগুলো ঘুরতে পারেন সেজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে পর্যটকদের গাইড লাইনে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
এবার ঈদে টানা ৯ দিন ছুটি থাকায় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।