অযত্নে পড়ে আছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের জাদুঘর, রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা
- আজও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
- নামে মাত্র জাদুঘর, বাস্তবে একটি সাধারণ পাঠাগারেই সীমাবদ্ধ।
- উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সাবেক রামনগর, বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর গ্রামে কেটেছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের শৈশব। সরকারিভাবে পূর্বের রামনগর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর নামকরণ করা হলেও তার স্মৃতি রক্ষায় গড়ে তোলা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর আজও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। উপজেলার রামনগর হাই স্কুলের পাশে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। দীর্ঘ ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেখানে বীরশ্রেষ্ঠের জীবন ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত নেই। নামে মাত্র জাদুঘর, বাস্তবে সেটি কার্যত একটি সাধারণ পাঠাগারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রন্থাগারে কিছু বই থাকলেও পাঠক সংখ্যা কম। বই পড়তে আসা অধিকাংশই স্থানীয় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। যাদুঘর কক্ষে নেই কোনো ঐতিহাসিক দলিল, ব্যবহার্য সামগ্রী কিংবা ছবি।
আরও পড়ুন: মনজুর এলাহী'র উপরই তৃণমূলে আস্থা, রাজনীতির মাঠে বাড়ছে জনপ্রিয়তা
স্থানীয় পাঠক শান্ত ইসলাম বলেন, আমি মাঝেমধ্যে এখানে বই পড়তে আসি। আমাদের গ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের আত্মত্যাগ আমাদের গর্বের। কিন্তু জাদুঘরে তার স্মৃতিচিহ্ন না থাকায় আমরা হতাশ। প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বই না থাকায় ধীরে ধীরে পাঠকের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গ্রন্থাগারটি স্কুলের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে হওয়ায় স্কুল চলাকালে সাধারণ মানুষ ঢুকতে সংকোচ বোধ করে। আলাদা প্রবেশ গেইট থাকলে আরও ভালো হতো।
গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান বিউটি আক্তার জানান, বর্তমানে এখানে ৪ হাজার ২০০ বই রয়েছে। তবে ২০০৮ সালের পর নতুন কোনো বই আসেনি। পাঠকদের জন্য নিয়মিত ৩টি বাংলা ও ১টি ইংরেজি পত্রিকা রাখা হতো এখন বন্ধ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন
তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে দেয়ালের ভেতরে পানি জমে ক্ষতি হচ্ছে, অধিকাংশ বৈদ্যুতিক বাতি নষ্ট, নিজস্ব গেইট না থাকায় দর্শনার্থীরা নিয়মিত আসতে পারছেন না। এসব সমস্যা উল্লেখ করে জেলা পরিষদে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের নিজ বাড়িটিও পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়। স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করেন। বছরে এক-দুইবার গাড়ি নিয়ে এসে বাড়ি দেখে আবার চলে যান। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বাড়িটির অবস্থাও করুণ।
এদিকে বাড়ির অদূরে অবস্থিত মতিউর রহমান জাদুঘর ও এর আশপাশ এলাকা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগজনক অভিযোগ।
স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, দিনের বেলায় একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকলেও রাতে না থাকায় সেখানে রাতের বেলায় নেশাখোরদের প্রতিনিয়ত আড্ডা বসে এবং মাদক সেবনের ঘটনাও ঘটে। এতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তারা আরও জানান, দিন দিন ওই এলাকায় মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রায়পুরা থানা প্রশাসন থেকে দূরে হওয়ায় এখানে পুলিশী টহল চোখে পড়ে না এবং পুলিশও আসে না।
এবিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের অসীম সাহসিকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করেছে আর উনার স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আঘাত হানা। এদিকে গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বইয়ের পাশাপাশি স্মৃতি জাদুঘরে তার ব্যবহার্য সামগ্রী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা জরুরি। একই সঙ্গে রামনগর হাই স্কুলকে তার নামে কলেজে উন্নীতকরণ, ইউনিয়নের নামকরণ এবং জেলা স্টেডিয়ামের নাম বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের নামে নামকরণের জোর দাবি জানাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি তার জন্মভূমিতেই স্থাপিত। এটি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।





